আমার বাড়ি কক্সবাজার। বাড়ি থেকে সমুদ্রে হেটে যেতে ১৫ মিনিটের বেশি লাগেনা। সে কারণেই চট্টগ্রামমুখী হওয়ার আগ পর্যন্ত কখনোই কক্সবাজার কিংবা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প আমার কাছে আকর্ষণের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেনি। কিন্তু যখন চট্টগ্রাম আসলাম, ধীরে ধীরে কক্সবাজারের সবকিছুই মিস করতে লাগলাম। বিশেষ করে, ওখানকার সূর্যাস্ত, রাতে ছাদের উপর থেকে শোনা সমুদ্রের গর্জন, ইত্যাদি! কক্সবাজারকে কত ভালোবাসি তা আমি বুঝতে পারি কক্সবাজার ছাড়ার পরে। সে কারণেই ঐ অঞ্চলের তুচ্ছাতিতুচ্ছ সমস্যা আমাকে আঘাত করে, রক্ত গরম করে। শুধুমাত্র পর্যটন না, জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যের দিক থেকে কক্সবাজার অনেক সমৃদ্ধ। একপাশে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র, অন্যপাশে পাহাড়, জঙ্গল- মিশ্র এক রোমাঞ্চের জায়গা কক্সবাজার। যেসময়ে সমগ্র ভারত ব্রিটিশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো, সে সময়ে কক্সবাজার এমন এক ব্রিটিশ শাসক পেয়েছিলো যিনি ঐ অঞ্চলের জন্য কাজ করতে করতেই অসুস্থ হয়ে মারা যান। কক্সবাজারের যেক'টি ইতিহাসের প্রাচীন দলিল পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই তাঁর লেখা। কক্সবাজার মানুষদের প্রেমে ফেলতে পারে, এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে এ অঞ্চলের!
পৃথিবীর অধিকাংশ পর্যটন অঞ্চল ঘাঁটলে দেখা যায়, ইন্ডেজেনাস পিপলসরা সবসময় পিছিয়ে থাকে। গত তিন চার বছর ধরে রাস্তাঘাটের অবস্থা বেগতিক, প্রচলিত যানবাহনের ভাড়া বেড়েছে তিনগুণ পর্যন্ত, যাতায়তে সমস্যার কারণে বার্মিজ মার্কেটে নেমে এসেছে বিপর্যয়, রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত আবসনের কারণে টেকনাফে বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, মোবাইল নেটওয়ার্ক করা হয়েছে সীমাবদ্ধ, টেকনাফ গেইম রিজার্ভ হয়েছে সাহারা মরুভূমি, বিশাল জনসংখ্যার খাদ্য যোগানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্থানীয়দের অবস্থা মরিমরি, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র সহ সবক্ষেত্রে হয়রানি, বিলম্ব, দুর্নীতি! এর সাথে যুক্ত হয়েছে নগর ব্যবস্থাপনায় অসমন্বয়!
কয়েকদিন আগে আলুভর্তা, ডাল নিয়ে একটি খবর চাউর হয়েছিলো। চার পাঁচশো টাকার হিসেব দেখানো হয়েছিলো। অঙ্কের পরিমাণটি লোক দেখানো বলে স্থানীয় অনেকেই মন্তব্য করেছে, সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু আমি বিষয়টি নিয়ে পর্যটকদের মতোই হতাশ হয়েছি। এরও আগে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ছবি তোলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবির স্কিম নিয়ে কথা উঠেছিলো নানান সময়ে। পর্যটন সিজনে আবাসন খরচ নিয়ে প্রতিবছরই আলোচনায় আসে কক্সবাজার। ছোটবেলা থেকেই দোকান থেকে কোন কিছু কেনার সময় আমরা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি যাতে দাম কম রাখে! কিন্তু এমনটাতো হবার কথা না! সব কিছুরই দাম নির্ধারিত থাকা উচিত। পর্যটন নগরীতে অনেকেই আসেন টাকা উড়াতে। ইচ্ছে মতো টাকা খরচ করেন হোটেলে, বাজারে, গাড়িতে গাড়িতে। তাদের বিলাসিতা কেন অন্যান্য পর্যটক বা স্থানীয়দের ভোগতে হবে? যে এলাকা থেকে দেশের ইকোনমিতে বিশাল অংশ যোগ হচ্ছে সে এলাকার ব্যবস্থাপনা কেন এমন দুর্বল হবে?
গতকালকের একটি খবরে আমি খুব ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। কক্সবাজারে গণধর্ষণের কবলে পড়েছে একজন গৃহবধূ! কত বড় লজ্জার বিষয়! এমন খবর পর্যটন শিল্পের জন্য অশনি সংকেত। ইতোঃপূর্বে 'বয়কট কক্সবাজার' নামে নানান ট্যাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে চোখে পড়ছে। এ ব্যাপারটি করোনাউত্তর পর্যটন ব্যবসাকে আবার তলানিতে নিয়ে যেতে পারে। এটি সমগ্র ব্যবস্থানাকে আবার উলঙ্গ করে দিলো। ধ্বিক!