পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন দায়িত্ব- মাতৃত্ব। একজন মা তার বাচ্চাদের তিলেতিলে বড় করেন। শেখান পৃথিবীতে টিকে থাকার সব নিয়মকানুন। বাচ্চাদের বাঁচাতে অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করেন। তেমনই গুটিকয়েক প্রাণী মা'র বর্ণনা করলাম প্রতি ছবিতে-
Sumatran Rhino:
পনের মাস পর্যন্ত সন্তানদের গর্ভেধারণ করে। জন্মদানের পরে আরো পনের মাস গভীর যত্নে বড় কর তোলে বাচ্চাদের। পরবর্তী তিনবছর পর্যন্ত বাচ্চারা মায়ের সাথে থাকে। এ সময়গুলো সুমাত্রান গন্ডার খুব এগ্রেসিভ আচরণ করে। একজন মা'র কাছে সন্তানই সবার আগে তার প্রমাণ সুমাত্রান রাইনো। এই দীর্ঘ লালনপালনের সময়গুলোতে নতুন কোন বাচ্চা নেয় না তারা। ফলে প্রজননতন্ত্রে নানান সমস্যা দেখা দেয়। বন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে পড়েন অনেক মা।

নোট: শিং এর জন্য হত্যা ও দীর্ঘ প্যারেন্টাল কেয়ার জনিত কারণে বর্তমানে শুধু মাত্র ৮০ টি সুমাত্রান রাইনো পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে বলে ধারণা করা হয়।
Polar Bear:
জন্মদানের আগেই মায়েরা নিজেদের ওজন বাড়িয়ে নেয়। কেননা, সঞ্চিত প্রতিটি খাদ্যকণা বাচ্চা লালনের জন্য দরকার। বাচ্চা জন্মদানের পর আবাসস্থলের ধরনের উপর নির্ভর করে ভাল্লুক মা কে প্রায় ৮ মাস পর্যন্ত অভুক্ত থাকতে হয়। এ সময়গুলোতে পানি পানেরও সুযোগ থাকেনা।

কিন্তু বাচ্চারা কি না খেয়ে থাকে? নাহ। বাচ্চারা দিব্যি উচ্চ ফ্যাটযুক্ত মায়ের দুধ খেয়েই সময়টা কাটিয়ে দেয়।
Octopus:
মা মাত্রই সন্তানদের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করে। কিছু অক্টোপাস আছে যারা একেবারেই নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেয়।

মা অক্টোপাস হাজারের উপরে ডিম দেয়। তারপর তারা সমুদ্রতলার এক স্থানে অবস্থান নেয় এবং বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তারা বাচ্চাদের শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানির যোগান দেয়। সে কাজটিতে এত বেশি মনযোগ দেয় যে মাসের পর মাস কোন খাবার খায়না এবং ফলস্রুতিতে মৃত্যুবরণ করে।
Emperor Scorpion:
এরা পৃথিবীর বৃহত্তম কাঁকড়াবিছেদের একটি। জন্মদানের পর নিজেদের পিঠের উপর অপরিপক্ক সন্তানদের বহন করে।

একজন মা কাঁকড়াবিছে ৯-৩২ টি সন্তানের জন্ম দেন। সাদা বর্ণের এই ছোট বাচ্চারা প্রথম কয়েক সপ্তাহ মা'র সাহায্য ছাড়া বিন্দুমাত্র বাঁচতে পারেনা। এ সময় বাচ্চাদের খাবারের প্রয়োজন পড়েনা। ফলে মায়ের পিঠ যেন তাদের জন্য জ্যান্ত বাড়ি!
Harp Seal:
এই সিলগুলো বরফ আচ্ছন্ন স্থানে বাচ্চাদের জন্ম দেয়। এই স্থানগুলোতে মরু ভাল্লুকের আক্রমণ সহ নানান সমস্যার মোকাবিলা মায়েদের করতে হয়।

মা তার বাচ্চাদের একটানা ১২ দিন পর্যন্ত নিভিড় নিরিক্ষণে দুধ দিয়ে থাকে। বাচ্চারা উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুধ খেয়ে দিনে ৪.৮ পাউন্ড করে নিজেদের ওজন বাড়িয়ে নেয়। এটি মায়েদের জন্য অনেক কষ্টের। কেননা, এ সময়গুলোতে মায়েরা তেমন কোন কিছু খায় না এবং প্রতিদিন প্রায় ৬.৫ পাউন্ড করে ওজন হারাতে থাকে।
Sea Otter:
জন্মের পর একমাস পর্যন্ত এক মুহুর্তও মায়ের পিঠ ছেড়ে নামেনা সন্তান। এ সময়ে মা কোন কিছু খেতে পারেনা। সে সারাক্ষণ তার বাচ্চাকে আগলে রাখে।

কিন্তু সন্তানের পুষ্টির জন্য হলেও খেতে হবে। একা মা আর কি করতে পারে? দ্বিধায় পড়ে যায়! সমাধান হিসেবে খুব অল্প সময়ের জন্য বাচ্চাদের সীওইডের উপর শুইয়ে রেখে ঝটপট করে শিকারটা সেরে নেয়!
Panda:
অধিকাংশ সময় পান্ডারা জোড়া বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিটা মায়ের সক্ষমতা থাকে একটি মাত্র বাচ্চাকে লালল পালনের। ফলে, পান্ডা মা কে কঠিন এক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, বেছে নিতে হয় একটি সন্তান! এটি নিতান্ত কষ্টের কাজ এবং সেকারণে অনেকে পান্ডাদের খারাপ মা বলে থাকে। কিন্তু এ খারাপ মা-ই মাসের পর মাস বাচ্চাদের আগলে রাখে যাতে করে শরীরের তাপমাত্রা কমে না যায়।

সময়গুলোতে পান্ডা মা তেমন একটা কিছু খায়না। এমন কি পানি পর্যন্ত অনেকক্ষেত্রে পান করার সুযোগ পায়না।
Cheetah:
একজন চিতা মা হওয়া চারটিখানি কথা না! চিতা মা তার বাচ্চাদের বাঁচাতে রীতিমতো সংগ্রামে লিপ্ত হয়।

কিছুদিন পরপরই বাচ্চাদের নিয়ে নতুন জায়গায় রওনা দেয় যাতে শিকারীরা ধরতে না পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাচ্চারা মায়ের সাথে বছর খানেক থাকে। এ সময়গুলোতে তারা বাঁচার জন্য যা যা করা দরকার সব নিয়মকানুন শিখে নেয়!
Hippo:
জলহস্তীর বাচ্চারা অনেকসময় পানির নিচেই জন্মগ্রহণ করে। নতুন জন্মগ্রহণ করা বাচ্চারা এক মিনিটের কম সময় শ্বাস ধরে রাখতে পারে। মা জলহস্তী তাদের উপরে নিয়ে আসে এবং অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে!

মা ছাড়া যে অক্সিজেনটা মিলেনা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জলহস্তী।
African Lion:
সিংহ মা তাদের বাচ্চাদের বাঁচাতে কি না করে! ছোট বাচ্চারা না পারে শিকার ধরতে, না থাকে স্থির। অথচ চারপাশ বিপদে ঘেরা। অন্যান্য শিকারী তো আছেই, পুরুষ সিংহ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে মেরে ফেলতে পারে ছোট ছোট এই বাচ্চাদের।


একেতো উচ্চ ম্যাটাবলিজম রেইট, তারপর চঞ্চল বাচ্চাদের শত্রুর হাত থেকে বাঁচানো- এ এক অসম্ভব কাজ যা সিংহ মা'রা করে থাকে।